ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া কয়েকদিন আগে বোমা বিস্ফোরণে ইরানের রাজধানী তেহরানে নিহত হয়েছেন। মার্কিন গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ অনুষ্ঠান শেষ করে হানিয়া গেস্টহাউসে নিজের রুমে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে বোমা বিস্ফোরিত হয়।
বিস্ফোরণে হানিয়া ও তার একজন দেহরক্ষীও নিহত হন। উত্তর তেহরানে অবস্থিত বহুতল ভবনটি বর্তমানে ইরানে বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয় যে, ইসরায়েল ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে হানিয়াকে হত্যা করেছে। আর ওই ক্ষেপণাস্ত্র সম্ভবত একটি ড্রোন বা বিমান থেকে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। কিন্তু তখন এমন প্রশ্নও উঠেছিল যে, ইসরায়েল কীভাবে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফাঁকি দিল!
প্রশ্ন উঠছে, ইসরায়েল ইরানের রাজধানীতেই এমন সাহসী বিমান হামলা চালাতে সক্ষম হলো কীভাবে। তবে মধ্যপ্রাচ্য, ইরান ও মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাতে ভিন্ন কথা জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস।
ইরানের কর্মকর্তারা জানান, বিস্ফোরণে ভবনটি কেঁপে ওঠে। কয়েকটি জানালা ভেঙে যায় এবং একটি দেয়াল আংশিকভাবে ধসে পড়ে। মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তেহরান সফরের সময় হানিয়া বেশ কয়েকবার এই গেস্টহাউসে উঠেছিলেন।
ইরান ও হামাস এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে। একই ধরনের মূল্যায়নের কথা জানান কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তাও। যদিও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানান, হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তারা আগে থেকে জানতেন না।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের পাঁচটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, হানিয়া যে গেস্টহাউসে অবস্থান করছিলেন সেখানে অন্তত দুই মাস আগে বোমা পেতে রাখা হয়েছিল। তবে গেস্টহাউসে বোমাটি কীভাবে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল তা স্পষ্ট নয়।
মধ্যপ্রাচ্যের কর্মকর্তারা বলেছেন, সম্ভবত হত্যার পরিকল্পনা করতে কয়েক মাস সময় লেগেছিল এবং ভবনটিতে নিবিড় নজরদারি চালিয়েছিল হত্যাকারীরা। দুই ইরানি কর্মকর্তা বলেছেন, তারা জানেন না কীভাবে বা কখন বিস্ফোরকগুলো কক্ষে রাখা হয়েছিল।
যদিও নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, হত্যাকারীরা ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় একটি ভিন্ন ধরনের ফাঁককে কাজে লাগাতে পেরেছে। হত্যাকারীরা নিরাপত্তার ফাঁক গলে হামলার কয়েক সপ্তাহ আগেই বোমা পেতে লুকিয়ে রাখে।
তিনজন ইরানি কর্মকর্তা বলেছেন, এ ধরনের ঘটনা ইরানের বুদ্ধিমত্তা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য একটি বিপর্যয়কর ব্যর্থতা এবং আইআরজিসির জন্য একটি বিশাল বিব্রতকর অবস্থা। কারণ, আইআরজিসিই হানিয়ার সফরের যাবতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করত।